গ্রাম আদালত
পল্লীগ্রামেঅধিকার বঞ্চিত আপামর জনগণের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠারলক্ষ্যে ১৯৭৬ সালেগ্রাম আদালত গঠিত হয়েছে৷ গ্রাম আদালত গ্রামের মানুষের সবচাইতে কাছের আইনগতপ্রতিকার পাবার আশ্রয়স্থল৷ কম খরচে কম সময়ে গ্রাম পর্যায়ে ছোটখাটো অপরাধেরবিচারকার্য নিস্পত্তির জন্যই গ্রাম আদালত৷ গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬অনুযায়ী গ্রাম আদালতের যাবতীয় কার্যক্রম প্ররিচালিত হয় ৷
গ্রাম আদালত গঠন
গ্রামআদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান এবং বাদী ও বিবাদীউভয় পক্ষে দু'জন করে প্রতিনিধি নিয়ে অর্থাত্ মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রামআদালত গঠিত হয়৷ উভয়পক্ষের মনোনীত দু'জন বিচারকের মধ্যে একজনকে ইউনিয়নপরিষদের সদস্য হতে হয়৷ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতেরচেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন৷ যদি কোনও কারনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন অথবা তার নিরপেক্ষতানিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোনওসদস্যকে (যাকে কোনও পক্ষ মনোনীত করেনি) গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান মনোনীতকরেন৷ যদি কোনও পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের কোনও সদস্যকে পক্ষপাতিত্বের কারণেমনোনীত করতে না পারেন তাহলে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্য কোনও ব্যক্তিকেগ্রাম আদালতের সদস্য করা যাবে৷
গ্রাম আদালতের এখতিয়ার
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে ফৌজিদারী ও দেওয়ানী এ দু'প্রকার মামলার বিচার হতে পারে৷
ফৌজদারী বিষয়সমূহ
§বেআইনীজনতারসদস্য হওয়া বা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত (বে-আইনী) জনতার সদস্য সংখ্যা ১০ বাতার কম হতে হবে (ধারা ১৪৩ ও ১৪৭ দঃ বিঃ), সাধারণ আঘাত, অপরাধজনক অনধিকারপ্রবেশ, ক্ষতিকারক কাজ, ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা (ধারা ৩১২, ৪২৭ ও৪৪৭ দঃ বিঃ) হাতাহাতি, বে-আইনি অবরোধ, অবৈধ শক্তি প্রয়োগ, অবৈধ ভয়ভীতিপ্রদর্শন, মাদকাসক্তি, ইঙ্গিতের মাধ্যমে নারীর শ্লীলতাহানি ইত্যাদি (ধারা১৬, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৮, ৫০৪ (১ম ভাগ), ৫০৮, ৫০৯ ও ৫১০ দঃ বিঃ);
§সকল ধরনের চুরি (চুরিকৃত মূল্যের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা বা তার কম হলে (ধারা ৪৭৯, ৩৮৫ ও ৩৮১ দঃ বিঃ);
§অস্থাবর সম্পদ আত্মসাত, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, দলিলাদির ধ্বংস সাধন (ধারা ৪০৩, ৪০৬, ৪১৭ ও৪২০ দঃ বিঃ)৷
দেওয়ানী বিষয়সমূহ
§চুরির টাকা আদায়ের মামলা
§অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদাযের মামলা
§দখল হারানোর এক বছরের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দখল উদ্ধারের মামলা
§ধ্বংসকৃত অস্থায়ী জিনিসপত্রের ক্ষতিপূরন আদায় সংক্রান্ত মামলা
§গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশের জন্য খেসারতের মামলা
§কতগুলো ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারে না, যেমন -
- অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বে যদি কোনও উচ্চতর আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়ে থাকে
- যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সম্পত্তি জড়িত থাকে
- বিদ্যমান কলহের ব্যাপারে কোনও সালিসের ব্যবস্থা করা হলে
- সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কার্যরত কোনও সরকারী কর্মচারীর পক্ষ হয়ে থাকলে৷
অনেকেগ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থাকে এক করে ফেলে৷ গ্রাম আদালত এবং সালিসীব্যবস্থা দু'টি ভিন্ন জিনিস৷ গ্রাম আদালতে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী দুই ধরনেরবিচার করার ক্ষমতা রয়েছে৷ কিন্তু সালিসী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র পারিবারিকসমস্যার (যেমন - ভরণপোষন, দেনমোহর, বহুবিবাহ ইত্যাদি) সমাধান করা হয়৷সালিসী ব্যবস্থা যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন সংস্থা করতে পারে৷
:-:সালিসী ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন:-:
কোর্ট ফি :
গ্রামআদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট মামলার আবেদনপত্র দায়ের করতে হবে৷ ফৌজদারী মামলা হলে দু'টাকার এবং দেওয়ানী মামলা হলেচার টাকা ফি লাগবে৷ দরখাস্তের সাথে ফি প্রদানের রসিদ দাখিল করতে হবে৷
গ্রাম আদালতের স্থান নির্বাচন
যেইউনিয়নে এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হয়৷ একটিইউনিয়ন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু বিবাদী অন্য ইউনিয়নের হলে স্ব-স্বইউনিয়ন হতে সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন৷
গ্রাম আদালতের ক্ষমতা
গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারে৷ দু'টি ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত জরিমানা করতে পারে
প্রথমতঃ গ্রাম আদালত অবমাননার দায়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা৷
দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নয় এমন দলিল দাখিল করতে অস্বীকার বা সমন দিতে অস্বীকার করলে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা জরিমানা করতে পারে৷
গ্রাম আদালতের কার্যপদ্ধতি
গ্রামআদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ৪ টাকা ও ফৌজদারীমামলার ক্ষেত্রে ২ টাকা ফি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিচারপ্রার্থী আবেদন করতে পারে৷ আবেদনপত্রে নিম্নে বর্ণিত বিবরণাদি থাকতে হবে:
§ইউনিয়ন পরিষদের নাম
§আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
§বিবাদীর নাম ও ঠিকানা
§ইউনিয়ন পরিষদের নাম, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে
§সালিশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ৷
গ্রাম আদালতের বিচার পদ্ধতি :
§আবেদনপত্রগৃহীত হলে তা ১ নম্বর ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হয়৷ অভিযোগ অমূলক মনে হলেচেয়ারম্যান আবেদন নাকচ করে দিতে পারেন৷ নাকচের আদেশ অন্যায়ভাবে করা হলেবিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেটের নিকটপুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন৷
§আবেদন গৃহীত হলে নির্দিষ্ট তারিখ ওসময়ে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে চেয়ারম্যান সমন দেবেন৷ সমনব্যক্তিগতভাবে জারি করতে হবে, সমনের উল্টো পৃষ্ঠায় সমন প্রাপকের প্রাপ্তিসূচক স্বাক্ষর নিতে হবে৷ বিবাদীকে পাওয়া না গেলে সমনের এক প্রস্থ তার বাড়িরপ্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিতে হবে এবং তাতে সমন জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে৷
§সমনজারি এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষকে তাদের সদস্য মনোনীত করতে বলবেন এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে আদালত গঠিতহবে৷ আদালত গঠিত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে লিখিত আপত্তি দাখিল করতেবলবেন৷ লিখিত না দিলে মৌখিকভাবে বলতে বা তা লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ নির্দষ্টদিনে আদালত বিচারে বসবে৷ শুনানি ৭ দিনের বেশি স্থগিত রাখা যাবে না৷
§আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে ব্যর্থ হলে চেয়ারম্যান যদি মনে করেন আবেদনকারী অবহেলা করছে তাহলে তিনি আবেদন নাকচ করতে পারেন৷
§নাকচের ১০ দিনের মধ্যে পুনঃবহাল করে মামলার তারিখ নির্দিষ্ট করবেন৷
§অনুরূপভাবেবিবাদী অবহেলা করে অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান মামলার শুনানি নিষ্পত্তিকরবেন৷ এক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে বিবাদী আবেদন করলে মামলাটি পুনঃবহাল করেশুনানির জন্য তারিখ ধার্য করবেন৷
গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত
গ্রামআদালতের রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে৷ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত বা চারপঞ্চমাংশ ভোটে গৃহীত হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না৷ যদি দু-তৃতীয়াংশভোটে সিদ্ধান্ত হয়, তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে৷ সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৩০ দিনেরমধ্যে যে কোনও পক্ষ ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে থানা ম্যাজিস্ট্রেট এবংদেওয়ানী মামলার মামলার ক্ষেত্রে সহকারী জজ (মুন্সেফ) এর আদালতে আপীল করতেপারবেন৷
জরিমানা আদায়
আদালত অবমাননা ওইচ্ছাকৃতভাবে সমন অমান্য করার জন্য জরিমানা হলে অথবা জরিমানার অর্থ পরিশোধকরতে অস্বীকার করলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর তথ্য উল্লেখ করে থানাম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠালে তিনি তার নিজের কোর্টের রায় মনে করে তা আদায়করে দেবেন এবং অনাদায়ে জেল/জরিমানা হতে পারে৷ ক্ষতিপূরণের টাকা নির্দিষ্টসময় অতিবাহিত হওয়ার পর বকেয়া টাকা হিসাবে আদায় করা হবে
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস